আমার চেয়ে কয়েক বছরের বড় মাঝবয়সী সেই মানুষটাকে সেদিন খুব অসহায় লাগছিল। কুঁচকে ছিল তাঁর ভুরুদুটো, মুখে একটা অসহায় বিপন্নতা! ‘আরে, সিনেমাটার পোস্টারে ভুল বানানে কামিং শব্দটা লিখেছে কেন? নাকি এই বানানেও কামিং শব্দের একটা মানে হয়?’ শুনে হাসি চেপে কোনওমতে বলেছিলাম, ‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি কী বলছে? সেটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছ না কেন?’ ‘আরে দূর, সেকি আমি আগেই দেখিনি নাকি? এই বানানটা সেখানে নেইই। cumin শব্দটা আছে, সেটার মানে দিয়েছে, প্লেজ্যান্ট স্মেলিং সিডস ইউজড ফর ফ্লেভারিং।’ আরেকটু হলেই আমার হাসিটা ছিটকে বেরতো। কোনওমতে চাপলাম। বুঝলাম, সব বিষয়ে সবজান্তা সেজে রেলা নেয় এই যে মালটা, সে আর যাই হোক, সবিতা ভাভির দুর্দান্ত পর্নো কমিকসগুলো নেড়ে দেখার সুযোগ পায়নি আজ অব্দি। বেশ ক’বছর আগে সেই কমিকসগুলো থেকেই তো আমার গুচ্ছের স্ল্যাং শেখা, আর ‘কামিং’ মানে যে কী, সে তো একেবারে ছবি-টবি দিয়ে সেখানে সচিত্র বিবরণে বোঝানো থাকত।
জীবনের নিভৃততম সেই চরম পুলককে চালু ইংরেজি খিস্তির লব্জে বেঁধে তাকে দিয়ে ছবির পোস্টার, ছবির আগমন-ঘোষণা, ছবির ট্রেলর, ছবির একটা গোটা গান। বাংলা সিনেমার ইতিহাস ১০০ বছর হতে চলল এবং এই একশো বছরে আর একটা সিনেমাও এভাবে বীর্যপাতের সুখের সঙ্গে ফিল্ম রিলিজের তৃপ্তিটাকে মিলিয়ে-গুলিয়ে দিতে পারেনি দাদা! বিরসা দাশগুপ্তের তৃতীয় ছবি ‘অভিশপ্ত নাইটি’ বটতলার লুকনো বই খুলে বাঙালির গোপন যৌনতা যেন হাট করে মেলে ধরল সংস্কৃতির মহাসড়কে। এরপর ছবি দেখতে বসে মানুষজন একটু ভিরমি না খেয়ে পারে ? বিরসা নিজেই সেটা বলেছেন এ ছবির একটা সংলাপে, সেন্সরবোর্ডের সদস্য মানিকবাবুর (অভিনয়ে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়) জবানিতে। ‘এ ছবির যা নাম, ভদ্রলোকজন তো কেউ দেখবে বলে মনে হয় না!’ ছবি শেষ হয়ে যাবার পরে আলো জ্বলে উঠতে উঠে দাঁড়িয়ে আমি চোখ কচলে দেখলাম, পূর্ব শহরতলির কুলরাজ ব্রডওয়ের ১৪৯ টাকার টিকিটের সিনেমাহল তখন কানায় কানায় ভর্তি।
মন দিয়ে এন্দস্ক্রোল প্ড়ব কি, আমি তখন হতবাক হয়ে সেই জনরাশিকে দেখতে ব্যস্ত। সেই ভোটের বাজারে খবরের কাগজে এক টাইপের ছবি খুব বিকোয় না যে অজ পাড়া গাঁ-র অথর্ব দিদিমা, যুবক নাতির ভরসায় কোনওমতে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বহুদূরের ভোটবুথে ভোট দিতে গেছেন। বললে বিশ্বাস করবেন না, অভিজাত এই প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে সেই এক দৃশ্য দেখে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের চোটে প্রায় দম বন্ধ হয়ে এল আমার। মাথার সব চুল সাদা, বয়সের ভারে ন্যুব্জ দিদিমা দেয়াল ধরে ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন কোনওমতে, একহাত নাতির বয়সী সঙ্গীর কাঁধে রাখা! যৌনতা নিয়ে এই তুলকালাম ফক্কুড়ির ছবি নিয়ে বয়স নির্বিশেষে বাঙালির এই সেলিব্রেশন কি নিছক বড় কাগজের প্রচার-লীলার হাতযশ? শুনতে পেলাম, ভিড়ের মধ্যে পাশ থেকে কেউ বলল : ‘এর আগে আর কোনওদিন খবর কাগজে ছবি রিলিজের দিন সকালবেলাতেই রিভিউ ছাপা হতে দেখেছিস? নামী লেখিকা রিভিউ করছে, ১০ এর মধ্যে ৯ দিচ্ছে, এরপরেও যদি বাকি হিসেবটা বুঝতে না পারিস তো আর কিছু বলার নেই রে’। তা তো হল, কিন্তু ছবিটা কেমন লাগল? হল-ফেরত বাঙালির মুখ এই বিষয়ে একদম বন্ধ। আক্ষরিক অর্থেই বিলো দ্য বেল্টে কড়া মারটা খাবার পর আগে বাঙালি কিছুক্ষণ ওটা চেপে ধরে বসে থাকবে নাকি ছবির ভাল-মন্দ নিয়ে মতামত দেবে?
‘বিলো দ্য বেল্ট’ মানে ঠিক কীরকম, সেটা বোঝাতে গেলে ছবির গল্পটা নিয়ে দু-চার কথা বলা দরকার। ছবির শুরুতে সেই গত শতকের এক প্রেমকথা। বার-গায়িকা মনিকা (পাওলি) আর তার প্রেমিক রাজার (ইন্দ্রনীল) ব্যর্থ প্রেমলীলার শেষ হয় রাজার ছোঁড়া গুলিতে মনিকার মরণে। মনিকার অভিশপ্ত নাইটিটা এরপর শুরু করে তার অবিশ্বাস্য উড়ান। তপন সিংহের ছবিতে হারমোনিয়াম (১৯৭৬) কিংবা কৌশিক গাঙ্গুলির ছবিতে ল্যাপটপ (২০১২) কীভাবে এক সংসার থেকে অন্য সংসারে পৌঁছে যেত মনে আছে তো? এই ছবিতে সেই জায়গা নিল এই অভিশপ্ত নাইটি। হারমোনিয়াম বা ল্যাপটপটা আর যাই হোক অভিশপ্ত ছিল না। কিন্তু এই নাইটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে কামনার অভিশাপ। যে এই নাইটি গয়ে চাপায়, তার শরীরে দেহজ কামনা তখন ফুটতে থাকে টগবগিয়ে!
শুনতে যতটা সরল লাগছে, গল্পটা অবশ্য ঠিক তত সরলভাবে বলেননি বিরসা। একটা ছবির মধ্যে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন আরেকটা ছবি। কীরকম? ছবির গোড়াতেই আমরা দেখতে পাই, সেন্সর বোর্ডের স্ক্রিনিং সেশন চলছে। সমাজের নানান স্তর থেকে প্রতিনিধিরা এই সেন্সর বোর্ডের সদস্য। সেখানে যেমন আছেন খোদ দমকলমন্ত্রী (অভিনয়ে সুপ্রিয় দত্ত), সেরকম আছেন মনোবিদ (অভিনয়ে অভিজিৎ গুহ) বা অন্য আর পাঁচটা পেশার মানুষও (সুদেষ্ণা রায়, সুজন মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক প্রমুখ)। চালু লব্জে এঁদের সেন্সর বোর্ড বলেই ডাকা হয় কিনা, আর এঁরাও ছবি দেখতে বসে কচকচ করে ছবির আপত্তিজনক সিন-সিনারি কেটে বাদ দিতেই অভ্যস্ত কিনা, তাই বিরসা এই প্রিভিউ রুমটাকে তুমুল ফচকেমি করে সাজিয়েছেন নানাবিধ কাঁচির প্রতীক-শ্লেষে। তবে আসল মজাটা ছুঁয়ে যাননি একবারও, যে ভারতে সত্যি সত্যি সেন্সর করার জন্যে কোনও বোর্ড কিন্তু আসলে একজিস্টই করে না! যে বোর্ডটা পরিচালক — প্রযোজকের সাধের ছবিটা ছিঁড়ে-কেটে ভুষ্টিনাশ করে, সেই বোর্ডটার আসল নাম হল সি বি এফ সি। মানে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন। নাম থেকেই পরিষ্কার, তারা বড়জোর ছবি দেখে সেটা কাদের দেখার উপযোগী, সেই নিদানটুকু দিতে পারেন, কিন্তু ছবি কেটেকুটে একসা করতে পারেন না। যাক গে ওসব অকাজের কথা, এখন কাজের কথা এইটুকু যে, বিরসার ছবিতে সেন্সর প্রিভিউ রুমে যে ছবিটার স্ক্রিনিং চলছে, সেই ছবিটার নমই হল গিয়ে আসলে : ‘অভিশপ্ত নাইটি’! বোর্ডের সদস্যরা একটু করে সেই ছবি দেখছেন, অত, আর কোথায় কোথায় ‘বিপ’ সাউন্ড লাগালে সেই সর্বনাশকে একটু হলেও ঠেকিয়ে রাখা যাবে, সেটা নিয়ে কাতর আকুতি ছাড়ছেন। আমরা দর্শকেরা সেই ছবি ‘অভিশপ্ত নাইটি’ দেখে ফেলছি সেন্সর কর্তাদের সঙ্গে সঙ্গেই, সঙ্গে তাঁদের ইন্টু-মিন্টু আলোচনা শুনতে পাওয়াটা উপরি পাওনা।
মূল ছবিটা সাতটা চ্যাপ্টারে ভেঙেছেন বিরসা। শুরু হল ‘দত্ত বাড়ির হাহাকার’ দিয়ে। এটা সেই দত্ত বাড়ি, যেখানে বাড়ির মেয়ে-বউ-কাজের মেয়ে সব হাঁ করে স্টার জলসায় ‘মা’ দেখে, আর সে সময়ে ঝড় উঠলে ছাদে কাপড় তুলতে গিয়ে হাতে পায় সেই রহস্যময়ী নাইটি (রাত আটটায় ‘মা’ টেলিকাস্টের সময় ছাদের আকাশে শেষ বিকেলের আলো কেন, সে ঘটনাও নাইটির মতই রহস্যময়ী বটে)। সেই নাইটি নিয়ে বাড়িতে তারপর তুলকালাম। ডাঁসা বৌদির (লকেট চ্যাটার্জি) শরীরে নাইটি চড়ানো মাত্র শরীর যেন কামবাসনায় ফুটতে থাকে। সারাদিনের পর ক্লান্ত ঘুমন্ত বরকে তখন আর ভাল লাগে নাকি, ধুসসস। তার বদলে অনেক বেশি টাটকা লাগে সকালবেলার তাজা দেহাতি দুধওয়ালাকে। ব্যস, দুধের গামলা উলটে পড়ে, বৌদি দুধওয়ালার সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট লয়ে শরীর দোলানোয় মন দেন! নাইটি ছাড়ার পরেই আবার টনটনে পাপবোধ, কেষ্ট ঠাকুরের কাছে গিয়ে তখন সে কি ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না।
ক্যামেরা তখন ধাঁই ধাঁই করে জুম করছে কেষ্ট রাধাকে, আর আমার পাপী মনের ছিরিটা দেখুন, আমার চোখে তখন শুধু ভাসছে ওয়েনডি ডনিয়ের-এর সেই মহাবিতর্কিত নিষিদ্ধ বই ‘দ্য হিন্দুস : অ্যান অলটারনেটিভ হিস্টরি’-র দুর্দান্ত প্রচ্ছদটা। অগুনতি ন্যাংটো মেয়েছেলে দিয়ে তৈরি একটা আস্ত ঘোড়া, আর সেই ঘোড়ার ওপরে চেপে বাঁশি হাতে কেষ্ট ঠাকুর স্বয়ং। দুধওয়ালাকে লাগাতে দেবার পর পাপবোধে কিনা সেই কেষ্ট ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চাইতে গেল রসবতী বৌদিটা? বৌদির হাত থেকে সেই নাইটি কাজের মেয়ের (কৌশানি) খপ্পড়ে গিয়ে পড়লে আরও কেলেঙ্কারি। কামবাসনা মেটাতে যুবতী ঝি তখন চড়ে বসে বাড়ির দাদাবাবুর শরীরে। বাড়ির বৃদ্ধা শাশুড়িও (তনিমা সেন) বাদ যান না। নাইটিটা হাতে পেলে শরীর-জ্বালার চোটে নাতির গানের মাস্টারের ওপর চড়াও হন অতর্কিতে। এই দুজনের প্রবল সেক্সটা অবশ্য আর ক্যামেরায় ধরেননি বিরসা, স্রেফ হারমোনিয়ামের বেলোটার উদভ্রান্ত টিপুনির সাজেশন দিয়ে কাজ সারতে চেয়েছেন।
পরের চ্যাপটার ‘বোনু ও ভানু’। দত্ত বড়ির গপ্পে ঝড় আসার সময় যদি চারুলতার রেফারেন্স পেয়ে থাকেন, তো এই গপ্প তো আগাপাস্তলা রবি-রেফারেন্সে ভর্তি। গল্পের নামেই সুনীলের বিখ্যাত উপন্যাসের স্পুফ। ‘গুছাইত’ বাবার মেয়ে গায়িকা বনলক্ষ্মী হোড় (লাবনি সরকার) বরের (ভস্কর ব্যানার্জি) ‘হোড়’ টাইটেল ছেড়ে নিজেকে মার্কেট করার পরিত্রাহি চেষ্টায় ‘ঠাকুর’ টাইটল নিয়েছে। ‘হোড়’ পদবিটা ছাড়ল কেন? বরের এই জিজ্ঞাসার উত্তরে তার নিলাজ কনফেশন, ইংরেজিতে কেমন যেন শোনায়, সবাই এসে রেট জানতে চায় যে! হাসি চাপতে পারছেন না তো? আরও শুনুন। বিরাট ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখা রবিঠাকুরের সঙ্গে ডেলি কথা না বললে সে মেয়ের ভাত হজম হয় না। মনোবিদরা আবার এরই নাম দেন ‘এক্সট্রা টেগোর সিনড্রোম’। শাড়িবাদী বনলক্ষ্মী যেদিন হঠাৎ করে নাইটি পরে বসে, সেদিন ঘটে সমূহ সর্বনাশ, কামবাসনার চোটে সে জীবনে প্রথমবার সেক্স করে ফেলে তার বহুযুগের পুরনো বরটার সঙ্গে! তারপর তার সে কী হাউ হাউ কান্না রবি ঠাকুরের ছবির সামনে, তুমি থাকতে এ আমি কার সাথে কী করে বসলাম ঠাকুর? আর পরিচালকের মশকরা এখানে মাত্রাছাড়া, ছবির রবিদা কাল অব্দি জ্যান্ত ঠোঁটে বনলক্ষ্মীকে বলেছেন, তার গলাতেই রবি-গান সবচেয়ে বেশি খোলে, সেই রবিদা আজ সকালে স্বামী সেক্স-অপরাধে কিনা বেবাক ঘুরিয়ে রেখেছেন মুখ! বাপ রে বাপ, দেখেশুনে মনে হয়, বটতলার সাহিত্য নিয়ে এখন যেরকম দিগবিদিকে গবেষণাকর্মের হিড়িক লেগেছে, বিরসার এই ছবিও শিগগিরি সেই গবেষণার লিস্টিতে ঢুকল বলে।
পরের চ্যাপটার হল গিয়ে ‘পুরী সিরিজ’। বিয়ের পর হনিমুন সারতে নবদম্পতির (রাহুল-প্রিয়াংকা) পুরীভ্রমণ। সেখানে কবি বরের পাল্লায় পড়ে রাতের বিছানায় কবিতা শুনতে গিয়ে লচক-মচক বৌ তো হাই তুলে একসা। আর আসল কম্মের সময় দেখা গেল কী সর্বনাশ, সময়ের অনেক আগেই যে রসধারা প্রবাহিত। সুতরাং অতৃপ্ত বৌয়ের ধাতানি। বরের গুমরানি। প্রি-ম্যাচিওর ইজাকুলেশনের এই ঝটকা কাটিয়ে পরদিন সকালে দুজনে হাত ধরাধরি করে সমুদ্রতীরে, আর সেই সময় বরের হঠাৎ ঝিমুনির সুযোগে তাগড়াই একটা নুলিয়া বেছে বৌ সোজা ধাঁ! সঙ্গে তখন আবার ‘চিরদিনই তুমি যে আমার…’ সিনেমার সেই বিখ্যাত ‘বাতাসে গুনগুন’ গান! সত্যি বলতে কি, গান নিয়ে এমন ফাজলামো এই সিনেমায় এই একটা নয়, আরও অনেক। তার মধ্যে রবিঠাকুরের গান থেকে শুরু করে, ‘পৃথিবী হারিয়ে গেছে মরুসাহারায়’ কিংবা ‘ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও’, কোনটা নেই? ‘টোট্যালি টলিউড’ পর্বে ভুইঁফোড় প্রযোজক (সুমিত সমাদ্দার) একটু একটু করে গিলে খেতে থাকে কচি নায়িকা বৃষ্টিকে (তনুশ্রী), সেক্স অ্যাপিল বাড়ানোর জন্যে তার নতুন নাম দেয় ‘অপ্সরা’। তারপর নাইটির কল্যাণে ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় প্রযোজক আর এস জে-কে (মীর)যেভাবে কব্জা করে একরাতে ষোলটা নতুন ছবি সাইন করে সেই অপ্সরা, তাতে পেটের মধ্যে ভুসভুসিয়ে হাসি না উঠে উপায় নেই।
এখানেই শেষ নয়। এর মধ্যে কীভাবে যেন ঢুকে পড়ে গসিপ পত্রিকার ট্রেনি সাংবাদিক অপরেশ লাহিড়ি (পরমব্রত), জুতো না পরে চটি পরার অপরাধে যাকে সিনেমার (নাম : ‘ভালবাসার থার্ড ম্যারেজ’) মহরৎ পার্টিতে ঢুকতে দেয় না সিকিউরিটি। জুতো আর চটির এই করুণ কাহিনি পরিচালকের নিজের অভিজ্ঞতা কিনা জানা নেই। এর সঙ্গে এসে জোটে গসিপ পত্রিকার সমকামী সম্পাদক মধুময় পাল (অভিনয়ে ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ রচয়িতা দেবালয় ভট্টাচার্য), অ্যাসাইনমেন্ট ফেল করলে শাস্তি দেবার জন্যে যিনি সটান ট্রেনি সাংবাদিককে নিয়ে বাথরুমে ঢোকেন। দেবালয়কে এই চরিত্রে তুখোড় অভিনয় করতে দেখে ভরসা আসে, ঋতুপর্ণকে নিয়ে ব্যঙ্গ করাটা এতদিন শুধু মীরের একচেটিয়া ছিল, এখন অন্তত তার সঙ্গে আরেকটা নাম কমপিটিশনে আসতে পারে। নাইটি-কামনার চোটে বান্দ্রায় সলমন খানের বাড়ির সামনে সেই মধুদার মৃত্যুর পর পর্দায় মৃত্যুর সালটা অব্দি ২০১৩ বলে দেখিয়ে দেওয়া হয়, তখন মনে না পড়ে উপায় থাকে না ঋতুপর্ণের চলে যাবার বছরটাও ওই একই।
এছাড়াও গল্পে হাজির হয় এক রহস্যময়ী গনৎকার, ভবিষ্যদ্রষ্টা মিস বশীকরণ (গায়িকা জোজো), যার কল্যাণে অপরেশ পায় তার জীবনের প্রথম ব্রেকিং নিউজ : শহরে এত এত কেলেঙ্কারির আসল কারণ নাকি একটাই, সেই অভিশপ্ত নাইটি। চ্যাপটার সিক্স হল গিয়ে এই ‘ব্রেকিং নিউজ’। এরই মধ্যে আবার দুষ্টু লোককে পেটাই করতে সত্যি সত্যি সিনেমার নায়ক দেব-এর আবির্ভাব, আর এই ভূমিকায় বিশেষ চমক জাগিয়ে পর্দায় এসেছেন স্বয়ং দেব! এরপর চ্যাপটার সেভেনের নাম ‘আত্মা অবিনশ্বর’। সেই পর্যায়ে একদম শুরুর সেই মনিকা-রাজার কেচ্ছাটা আরেকবার আসে, এবার আরেকটু ডিটেলে। মনিকাকে মেরে ফেলার অপরাধে অভিশপ্ত হয় রাজা, ফের জন্ম নেয় পৃথিবীতে, এবার তার নাম অলোক, আর শাস্তি হিসেবে এই জন্মে তাকে ছেড়ে চলে যায় তার প্রেমিকা বৃষ্টি। ঠিক ধরেছেন, এই বৃষ্টিকে আবার আমি-আপনি আগেই দেখে ফেলেছি উঠতি নায়িকা অপ্সরার ফরম্যাটে। অবস্থাগতিকে তুমুল হতাশায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে অলোক আর অমনি পরিচালক চূড়ান্ত মশকরাটা করে জানিয়ে দেন এর পরের পার্টের নাম হতে চলেছে ‘অভিশপ্ত পাজামা’, আর সেটাও এসে পড়ল বলে।
প্রথম ছবি ‘০৩৩’ ছিল এক অবর্ণনীয় ভিস্যুয়াল ফিস্ট, ‘রেন মেশিন’ গানটা তো এত সুন্দর ছিল, যে এখনও গুন গুন করে গাইতে সাধ যায়। সে ছবিতে ভাই-বোনের অবৈধ ভালবাসার চাপা পাপ ঢাকা পড়ে গেছিল প্রায় — অদৃষ্টপূর্ব সিনেমাটোগ্রাফিতে। পরের ছবি ‘জানি দেখা হবে’ আরেক তীব্র ভালবাসার গল্প, তবে এবার আর বাস্তবতা নয়, অলৌকিক পরাবাস্তবতার দিকে ঝুঁকে গেছিল কাহিনির অভিমুখ। ছোট প্রযোজকের তৈরি দুটো ছবির একটাও বক্স অফিস সাফল্য পায়নি। অতঃপর বাংলার সবচেয়ে বড় প্রযোজকের সৌজন্যে সবিতা ভাভির পর্নো কমিকসের সঙ্গে বাঙালির বটতলা সংস্কৃতিকে পাঞ্চ করে তার এক আশ্চর্য সিনেমা-সেলিব্রেশন করলেন সবে চৌত্রিশ পেরিয়ে পঁয়ত্রিশে পা রাখা তরুণ পরিচালক। একসময় রিমেক সিনেমার নামে একশো হাত দূরে ছিটকে যেতেন, এখন সেই শুচিবায়ুগ্রস্ততার মুখে ছাই লেপে বানিয়ে ফেলেছেন তামিল ছবি ‘পিৎজা’-র বাংলা কপি ‘গল্প হলেও সত্যি’, পোস্ট প্রোডাকশন সেরে ছবির রিলিজ হবে এই বছরেই। তাঁর আগের দুটো ছবির রিলিজ বলতে গেলে জানতেই পারেনি কেউ, আর এবার তাঁর নতুন ছবিতে বিষয় ও প্রচারগুণে হল-এর সামনে পাবলিকের লম্বা লাইন। এই সবগুলোকে যদি ভাগ্যের ইউ-টার্ন না বলবেন তো আর কাকে বলবেন?
২০১০ সালে মাঘী পূর্ণিমার দিন (৩০ জানুয়ারি) বয়সে বেশ কিছুটা বড় বান্ধবী বিদীপ্তাকে সিঁদুর পরিয়েছিল বিরসা, বিদীপ্তার প্রথম বিয়ের কন্যা মেঘনা তখন আদর করে বিরসাকে ডাকত ‘বাবুই’ বলে। ঠিক চার বছর পরের মাঘী পূর্ণিমার দিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিরসার এই তৃতীয় ছবির রিলিজ। দেখেশুনে মনে হয়, ইচ্ছে করেই কি এমন একটা তিথিতে ছবির রিলিজ করালেন পরিচালক? এর সঙ্গে ছবির অনবদ্য কালচার শকটা হজম করতে করতে এটাও মনে পড়ে যাচ্ছিল, এই বাংলায় একমাত্র থার্ড জেনারেশন ফিল্মমেকার হল এই বিরসা দাশগুপ্ত। ঠাকুরদা হরিসাধন দাশগুপ্ত উত্তম-সুচিত্রাকে নিয়ে বানিয়েছিলেন কমললতার মত শরৎ-সাহিত্য। বাবা রাজা দাশগুপ্ত বানিয়েছেন চমকে দেওয়ার মত সব ডকুমেন্টারি, সিরিয়াল আর টেলিফিল্ম। সেই বংশের ছেলে বিরসা বাঙালির যৌন-সংস্কৃতি নিয়ে এমন রগড় করবে না তো আর কে করবে?
বছর আষ্টেক আগে সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় শারদীয় ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘প্যান্টি’ নামে এক না-কাহিনি। নারীর পোশাক নিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির মূল স্রোতে সেই বোধহয় প্রথম কেউ এমন কিছু লিখলেন। কী আশ্চর্য, সেও ছিল হঠাৎ করে হাতে-আসা এক বাঘছাল প্রিন্টের প্যান্টির বিচিত্র অভিযাত্রা-কথা। বিরসা-দেবালয়ের এ ছবিতে ‘সবিতা ভাভি’ অনুপ্রাণিত তুমুল যৌন উদ্দামতার পাশাপাশি কোথাও যেন সঙ্গীতার সেই অনবদ্য নির্মাণশৈলীটুকুও রয়ে গেছে চুপিসাড়ে। হয় এ ছবি বাঙালি তারিয়ে তারিয়ে দেখবে, আর না হলে ইন্টারভ্যালের আগেই বদহজমের চোঁয়া ঢেঁএকুরে মরবে।
হবে না? রাতে বিছানায় আমাদের যে নিভৃত সমাজ-বহির্ভূত কামনা জাগে, সেটার কথা এমন দিনের আলোয় সোজা সাপটা বলার মত বুকের পাটা আছে নাকি আমাদের কারুর? আর এ ছবি যে সেই সব গোপন কামনাসমূহেরই উদযাপন! ভিড় করে দেখতে তো যাচ্ছে কিন্তু বাঙালি এত হাই ভোল্টেজ (এবং কিছুটা অবিন্যস্ত) রসিকতা শেষ অব্দি হজম করতে পারলে হয়!
বেশ কয়েক বছর আগের একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা এই সূত্রে বলতেই হচ্ছে। এ ছবির অন্যতম প্রধান এক কলাকুশলীর (নামটা ইচ্ছে করেই লিখলাম না) সঙ্গে সেদিন দুপুরে এক প্রোডাকশন হাউসে জরুরি মিটিং। হঠাৎ সেই তরুণের তরফ থেকে স্পষ্ট এস এম এস, ‘দুপুরে মাংস-ভাত খাবার পর খুব ইচ্ছে করল বান্ধবীকে লাগাতে। তাই মিটিং-এ আসতে পারছি না, স্যরি’। কী চমকেছিলাম সেই সহজ, সরল, স্পষ্ট এস এম এস দেখে, বলার নয়। চমকাব না? বুঝেছিলাম ওই তরুন খুব বিরল এক বাঙালি, কারণ অমন অনেস্টিটা যে অনেক চেষ্টা করলেও আমার বা আমার চেনা আর পাঁচ বাঙালির মধ্যে আসবে না।
তরুন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তের ছবি ‘অভিশপ্ত নাইটি’র ছত্রে ছত্রেও সোজা সাপটা অনেস্টি। ছবি তো নয়, চাবুক।
জীবনের নিভৃততম সেই চরম পুলককে চালু ইংরেজি খিস্তির লব্জে বেঁধে তাকে দিয়ে ছবির পোস্টার, ছবির আগমন-ঘোষণা, ছবির ট্রেলর, ছবির একটা গোটা গান। বাংলা সিনেমার ইতিহাস ১০০ বছর হতে চলল এবং এই একশো বছরে আর একটা সিনেমাও এভাবে বীর্যপাতের সুখের সঙ্গে ফিল্ম রিলিজের তৃপ্তিটাকে মিলিয়ে-গুলিয়ে দিতে পারেনি দাদা! বিরসা দাশগুপ্তের তৃতীয় ছবি ‘অভিশপ্ত নাইটি’ বটতলার লুকনো বই খুলে বাঙালির গোপন যৌনতা যেন হাট করে মেলে ধরল সংস্কৃতির মহাসড়কে। এরপর ছবি দেখতে বসে মানুষজন একটু ভিরমি না খেয়ে পারে ? বিরসা নিজেই সেটা বলেছেন এ ছবির একটা সংলাপে, সেন্সরবোর্ডের সদস্য মানিকবাবুর (অভিনয়ে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়) জবানিতে। ‘এ ছবির যা নাম, ভদ্রলোকজন তো কেউ দেখবে বলে মনে হয় না!’ ছবি শেষ হয়ে যাবার পরে আলো জ্বলে উঠতে উঠে দাঁড়িয়ে আমি চোখ কচলে দেখলাম, পূর্ব শহরতলির কুলরাজ ব্রডওয়ের ১৪৯ টাকার টিকিটের সিনেমাহল তখন কানায় কানায় ভর্তি।
মন দিয়ে এন্দস্ক্রোল প্ড়ব কি, আমি তখন হতবাক হয়ে সেই জনরাশিকে দেখতে ব্যস্ত। সেই ভোটের বাজারে খবরের কাগজে এক টাইপের ছবি খুব বিকোয় না যে অজ পাড়া গাঁ-র অথর্ব দিদিমা, যুবক নাতির ভরসায় কোনওমতে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বহুদূরের ভোটবুথে ভোট দিতে গেছেন। বললে বিশ্বাস করবেন না, অভিজাত এই প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে সেই এক দৃশ্য দেখে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের চোটে প্রায় দম বন্ধ হয়ে এল আমার। মাথার সব চুল সাদা, বয়সের ভারে ন্যুব্জ দিদিমা দেয়াল ধরে ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন কোনওমতে, একহাত নাতির বয়সী সঙ্গীর কাঁধে রাখা! যৌনতা নিয়ে এই তুলকালাম ফক্কুড়ির ছবি নিয়ে বয়স নির্বিশেষে বাঙালির এই সেলিব্রেশন কি নিছক বড় কাগজের প্রচার-লীলার হাতযশ? শুনতে পেলাম, ভিড়ের মধ্যে পাশ থেকে কেউ বলল : ‘এর আগে আর কোনওদিন খবর কাগজে ছবি রিলিজের দিন সকালবেলাতেই রিভিউ ছাপা হতে দেখেছিস? নামী লেখিকা রিভিউ করছে, ১০ এর মধ্যে ৯ দিচ্ছে, এরপরেও যদি বাকি হিসেবটা বুঝতে না পারিস তো আর কিছু বলার নেই রে’। তা তো হল, কিন্তু ছবিটা কেমন লাগল? হল-ফেরত বাঙালির মুখ এই বিষয়ে একদম বন্ধ। আক্ষরিক অর্থেই বিলো দ্য বেল্টে কড়া মারটা খাবার পর আগে বাঙালি কিছুক্ষণ ওটা চেপে ধরে বসে থাকবে নাকি ছবির ভাল-মন্দ নিয়ে মতামত দেবে?
‘বিলো দ্য বেল্ট’ মানে ঠিক কীরকম, সেটা বোঝাতে গেলে ছবির গল্পটা নিয়ে দু-চার কথা বলা দরকার। ছবির শুরুতে সেই গত শতকের এক প্রেমকথা। বার-গায়িকা মনিকা (পাওলি) আর তার প্রেমিক রাজার (ইন্দ্রনীল) ব্যর্থ প্রেমলীলার শেষ হয় রাজার ছোঁড়া গুলিতে মনিকার মরণে। মনিকার অভিশপ্ত নাইটিটা এরপর শুরু করে তার অবিশ্বাস্য উড়ান। তপন সিংহের ছবিতে হারমোনিয়াম (১৯৭৬) কিংবা কৌশিক গাঙ্গুলির ছবিতে ল্যাপটপ (২০১২) কীভাবে এক সংসার থেকে অন্য সংসারে পৌঁছে যেত মনে আছে তো? এই ছবিতে সেই জায়গা নিল এই অভিশপ্ত নাইটি। হারমোনিয়াম বা ল্যাপটপটা আর যাই হোক অভিশপ্ত ছিল না। কিন্তু এই নাইটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে কামনার অভিশাপ। যে এই নাইটি গয়ে চাপায়, তার শরীরে দেহজ কামনা তখন ফুটতে থাকে টগবগিয়ে!
শুনতে যতটা সরল লাগছে, গল্পটা অবশ্য ঠিক তত সরলভাবে বলেননি বিরসা। একটা ছবির মধ্যে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন আরেকটা ছবি। কীরকম? ছবির গোড়াতেই আমরা দেখতে পাই, সেন্সর বোর্ডের স্ক্রিনিং সেশন চলছে। সমাজের নানান স্তর থেকে প্রতিনিধিরা এই সেন্সর বোর্ডের সদস্য। সেখানে যেমন আছেন খোদ দমকলমন্ত্রী (অভিনয়ে সুপ্রিয় দত্ত), সেরকম আছেন মনোবিদ (অভিনয়ে অভিজিৎ গুহ) বা অন্য আর পাঁচটা পেশার মানুষও (সুদেষ্ণা রায়, সুজন মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক প্রমুখ)। চালু লব্জে এঁদের সেন্সর বোর্ড বলেই ডাকা হয় কিনা, আর এঁরাও ছবি দেখতে বসে কচকচ করে ছবির আপত্তিজনক সিন-সিনারি কেটে বাদ দিতেই অভ্যস্ত কিনা, তাই বিরসা এই প্রিভিউ রুমটাকে তুমুল ফচকেমি করে সাজিয়েছেন নানাবিধ কাঁচির প্রতীক-শ্লেষে। তবে আসল মজাটা ছুঁয়ে যাননি একবারও, যে ভারতে সত্যি সত্যি সেন্সর করার জন্যে কোনও বোর্ড কিন্তু আসলে একজিস্টই করে না! যে বোর্ডটা পরিচালক — প্রযোজকের সাধের ছবিটা ছিঁড়ে-কেটে ভুষ্টিনাশ করে, সেই বোর্ডটার আসল নাম হল সি বি এফ সি। মানে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন। নাম থেকেই পরিষ্কার, তারা বড়জোর ছবি দেখে সেটা কাদের দেখার উপযোগী, সেই নিদানটুকু দিতে পারেন, কিন্তু ছবি কেটেকুটে একসা করতে পারেন না। যাক গে ওসব অকাজের কথা, এখন কাজের কথা এইটুকু যে, বিরসার ছবিতে সেন্সর প্রিভিউ রুমে যে ছবিটার স্ক্রিনিং চলছে, সেই ছবিটার নমই হল গিয়ে আসলে : ‘অভিশপ্ত নাইটি’! বোর্ডের সদস্যরা একটু করে সেই ছবি দেখছেন, অত, আর কোথায় কোথায় ‘বিপ’ সাউন্ড লাগালে সেই সর্বনাশকে একটু হলেও ঠেকিয়ে রাখা যাবে, সেটা নিয়ে কাতর আকুতি ছাড়ছেন। আমরা দর্শকেরা সেই ছবি ‘অভিশপ্ত নাইটি’ দেখে ফেলছি সেন্সর কর্তাদের সঙ্গে সঙ্গেই, সঙ্গে তাঁদের ইন্টু-মিন্টু আলোচনা শুনতে পাওয়াটা উপরি পাওনা।
মূল ছবিটা সাতটা চ্যাপ্টারে ভেঙেছেন বিরসা। শুরু হল ‘দত্ত বাড়ির হাহাকার’ দিয়ে। এটা সেই দত্ত বাড়ি, যেখানে বাড়ির মেয়ে-বউ-কাজের মেয়ে সব হাঁ করে স্টার জলসায় ‘মা’ দেখে, আর সে সময়ে ঝড় উঠলে ছাদে কাপড় তুলতে গিয়ে হাতে পায় সেই রহস্যময়ী নাইটি (রাত আটটায় ‘মা’ টেলিকাস্টের সময় ছাদের আকাশে শেষ বিকেলের আলো কেন, সে ঘটনাও নাইটির মতই রহস্যময়ী বটে)। সেই নাইটি নিয়ে বাড়িতে তারপর তুলকালাম। ডাঁসা বৌদির (লকেট চ্যাটার্জি) শরীরে নাইটি চড়ানো মাত্র শরীর যেন কামবাসনায় ফুটতে থাকে। সারাদিনের পর ক্লান্ত ঘুমন্ত বরকে তখন আর ভাল লাগে নাকি, ধুসসস। তার বদলে অনেক বেশি টাটকা লাগে সকালবেলার তাজা দেহাতি দুধওয়ালাকে। ব্যস, দুধের গামলা উলটে পড়ে, বৌদি দুধওয়ালার সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট লয়ে শরীর দোলানোয় মন দেন! নাইটি ছাড়ার পরেই আবার টনটনে পাপবোধ, কেষ্ট ঠাকুরের কাছে গিয়ে তখন সে কি ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না।
ক্যামেরা তখন ধাঁই ধাঁই করে জুম করছে কেষ্ট রাধাকে, আর আমার পাপী মনের ছিরিটা দেখুন, আমার চোখে তখন শুধু ভাসছে ওয়েনডি ডনিয়ের-এর সেই মহাবিতর্কিত নিষিদ্ধ বই ‘দ্য হিন্দুস : অ্যান অলটারনেটিভ হিস্টরি’-র দুর্দান্ত প্রচ্ছদটা। অগুনতি ন্যাংটো মেয়েছেলে দিয়ে তৈরি একটা আস্ত ঘোড়া, আর সেই ঘোড়ার ওপরে চেপে বাঁশি হাতে কেষ্ট ঠাকুর স্বয়ং। দুধওয়ালাকে লাগাতে দেবার পর পাপবোধে কিনা সেই কেষ্ট ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চাইতে গেল রসবতী বৌদিটা? বৌদির হাত থেকে সেই নাইটি কাজের মেয়ের (কৌশানি) খপ্পড়ে গিয়ে পড়লে আরও কেলেঙ্কারি। কামবাসনা মেটাতে যুবতী ঝি তখন চড়ে বসে বাড়ির দাদাবাবুর শরীরে। বাড়ির বৃদ্ধা শাশুড়িও (তনিমা সেন) বাদ যান না। নাইটিটা হাতে পেলে শরীর-জ্বালার চোটে নাতির গানের মাস্টারের ওপর চড়াও হন অতর্কিতে। এই দুজনের প্রবল সেক্সটা অবশ্য আর ক্যামেরায় ধরেননি বিরসা, স্রেফ হারমোনিয়ামের বেলোটার উদভ্রান্ত টিপুনির সাজেশন দিয়ে কাজ সারতে চেয়েছেন।
পরের চ্যাপটার ‘বোনু ও ভানু’। দত্ত বড়ির গপ্পে ঝড় আসার সময় যদি চারুলতার রেফারেন্স পেয়ে থাকেন, তো এই গপ্প তো আগাপাস্তলা রবি-রেফারেন্সে ভর্তি। গল্পের নামেই সুনীলের বিখ্যাত উপন্যাসের স্পুফ। ‘গুছাইত’ বাবার মেয়ে গায়িকা বনলক্ষ্মী হোড় (লাবনি সরকার) বরের (ভস্কর ব্যানার্জি) ‘হোড়’ টাইটেল ছেড়ে নিজেকে মার্কেট করার পরিত্রাহি চেষ্টায় ‘ঠাকুর’ টাইটল নিয়েছে। ‘হোড়’ পদবিটা ছাড়ল কেন? বরের এই জিজ্ঞাসার উত্তরে তার নিলাজ কনফেশন, ইংরেজিতে কেমন যেন শোনায়, সবাই এসে রেট জানতে চায় যে! হাসি চাপতে পারছেন না তো? আরও শুনুন। বিরাট ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখা রবিঠাকুরের সঙ্গে ডেলি কথা না বললে সে মেয়ের ভাত হজম হয় না। মনোবিদরা আবার এরই নাম দেন ‘এক্সট্রা টেগোর সিনড্রোম’। শাড়িবাদী বনলক্ষ্মী যেদিন হঠাৎ করে নাইটি পরে বসে, সেদিন ঘটে সমূহ সর্বনাশ, কামবাসনার চোটে সে জীবনে প্রথমবার সেক্স করে ফেলে তার বহুযুগের পুরনো বরটার সঙ্গে! তারপর তার সে কী হাউ হাউ কান্না রবি ঠাকুরের ছবির সামনে, তুমি থাকতে এ আমি কার সাথে কী করে বসলাম ঠাকুর? আর পরিচালকের মশকরা এখানে মাত্রাছাড়া, ছবির রবিদা কাল অব্দি জ্যান্ত ঠোঁটে বনলক্ষ্মীকে বলেছেন, তার গলাতেই রবি-গান সবচেয়ে বেশি খোলে, সেই রবিদা আজ সকালে স্বামী সেক্স-অপরাধে কিনা বেবাক ঘুরিয়ে রেখেছেন মুখ! বাপ রে বাপ, দেখেশুনে মনে হয়, বটতলার সাহিত্য নিয়ে এখন যেরকম দিগবিদিকে গবেষণাকর্মের হিড়িক লেগেছে, বিরসার এই ছবিও শিগগিরি সেই গবেষণার লিস্টিতে ঢুকল বলে।
পরের চ্যাপটার হল গিয়ে ‘পুরী সিরিজ’। বিয়ের পর হনিমুন সারতে নবদম্পতির (রাহুল-প্রিয়াংকা) পুরীভ্রমণ। সেখানে কবি বরের পাল্লায় পড়ে রাতের বিছানায় কবিতা শুনতে গিয়ে লচক-মচক বৌ তো হাই তুলে একসা। আর আসল কম্মের সময় দেখা গেল কী সর্বনাশ, সময়ের অনেক আগেই যে রসধারা প্রবাহিত। সুতরাং অতৃপ্ত বৌয়ের ধাতানি। বরের গুমরানি। প্রি-ম্যাচিওর ইজাকুলেশনের এই ঝটকা কাটিয়ে পরদিন সকালে দুজনে হাত ধরাধরি করে সমুদ্রতীরে, আর সেই সময় বরের হঠাৎ ঝিমুনির সুযোগে তাগড়াই একটা নুলিয়া বেছে বৌ সোজা ধাঁ! সঙ্গে তখন আবার ‘চিরদিনই তুমি যে আমার…’ সিনেমার সেই বিখ্যাত ‘বাতাসে গুনগুন’ গান! সত্যি বলতে কি, গান নিয়ে এমন ফাজলামো এই সিনেমায় এই একটা নয়, আরও অনেক। তার মধ্যে রবিঠাকুরের গান থেকে শুরু করে, ‘পৃথিবী হারিয়ে গেছে মরুসাহারায়’ কিংবা ‘ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও’, কোনটা নেই? ‘টোট্যালি টলিউড’ পর্বে ভুইঁফোড় প্রযোজক (সুমিত সমাদ্দার) একটু একটু করে গিলে খেতে থাকে কচি নায়িকা বৃষ্টিকে (তনুশ্রী), সেক্স অ্যাপিল বাড়ানোর জন্যে তার নতুন নাম দেয় ‘অপ্সরা’। তারপর নাইটির কল্যাণে ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় প্রযোজক আর এস জে-কে (মীর)যেভাবে কব্জা করে একরাতে ষোলটা নতুন ছবি সাইন করে সেই অপ্সরা, তাতে পেটের মধ্যে ভুসভুসিয়ে হাসি না উঠে উপায় নেই।
এখানেই শেষ নয়। এর মধ্যে কীভাবে যেন ঢুকে পড়ে গসিপ পত্রিকার ট্রেনি সাংবাদিক অপরেশ লাহিড়ি (পরমব্রত), জুতো না পরে চটি পরার অপরাধে যাকে সিনেমার (নাম : ‘ভালবাসার থার্ড ম্যারেজ’) মহরৎ পার্টিতে ঢুকতে দেয় না সিকিউরিটি। জুতো আর চটির এই করুণ কাহিনি পরিচালকের নিজের অভিজ্ঞতা কিনা জানা নেই। এর সঙ্গে এসে জোটে গসিপ পত্রিকার সমকামী সম্পাদক মধুময় পাল (অভিনয়ে ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ রচয়িতা দেবালয় ভট্টাচার্য), অ্যাসাইনমেন্ট ফেল করলে শাস্তি দেবার জন্যে যিনি সটান ট্রেনি সাংবাদিককে নিয়ে বাথরুমে ঢোকেন। দেবালয়কে এই চরিত্রে তুখোড় অভিনয় করতে দেখে ভরসা আসে, ঋতুপর্ণকে নিয়ে ব্যঙ্গ করাটা এতদিন শুধু মীরের একচেটিয়া ছিল, এখন অন্তত তার সঙ্গে আরেকটা নাম কমপিটিশনে আসতে পারে। নাইটি-কামনার চোটে বান্দ্রায় সলমন খানের বাড়ির সামনে সেই মধুদার মৃত্যুর পর পর্দায় মৃত্যুর সালটা অব্দি ২০১৩ বলে দেখিয়ে দেওয়া হয়, তখন মনে না পড়ে উপায় থাকে না ঋতুপর্ণের চলে যাবার বছরটাও ওই একই।
এছাড়াও গল্পে হাজির হয় এক রহস্যময়ী গনৎকার, ভবিষ্যদ্রষ্টা মিস বশীকরণ (গায়িকা জোজো), যার কল্যাণে অপরেশ পায় তার জীবনের প্রথম ব্রেকিং নিউজ : শহরে এত এত কেলেঙ্কারির আসল কারণ নাকি একটাই, সেই অভিশপ্ত নাইটি। চ্যাপটার সিক্স হল গিয়ে এই ‘ব্রেকিং নিউজ’। এরই মধ্যে আবার দুষ্টু লোককে পেটাই করতে সত্যি সত্যি সিনেমার নায়ক দেব-এর আবির্ভাব, আর এই ভূমিকায় বিশেষ চমক জাগিয়ে পর্দায় এসেছেন স্বয়ং দেব! এরপর চ্যাপটার সেভেনের নাম ‘আত্মা অবিনশ্বর’। সেই পর্যায়ে একদম শুরুর সেই মনিকা-রাজার কেচ্ছাটা আরেকবার আসে, এবার আরেকটু ডিটেলে। মনিকাকে মেরে ফেলার অপরাধে অভিশপ্ত হয় রাজা, ফের জন্ম নেয় পৃথিবীতে, এবার তার নাম অলোক, আর শাস্তি হিসেবে এই জন্মে তাকে ছেড়ে চলে যায় তার প্রেমিকা বৃষ্টি। ঠিক ধরেছেন, এই বৃষ্টিকে আবার আমি-আপনি আগেই দেখে ফেলেছি উঠতি নায়িকা অপ্সরার ফরম্যাটে। অবস্থাগতিকে তুমুল হতাশায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে অলোক আর অমনি পরিচালক চূড়ান্ত মশকরাটা করে জানিয়ে দেন এর পরের পার্টের নাম হতে চলেছে ‘অভিশপ্ত পাজামা’, আর সেটাও এসে পড়ল বলে।
প্রথম ছবি ‘০৩৩’ ছিল এক অবর্ণনীয় ভিস্যুয়াল ফিস্ট, ‘রেন মেশিন’ গানটা তো এত সুন্দর ছিল, যে এখনও গুন গুন করে গাইতে সাধ যায়। সে ছবিতে ভাই-বোনের অবৈধ ভালবাসার চাপা পাপ ঢাকা পড়ে গেছিল প্রায় — অদৃষ্টপূর্ব সিনেমাটোগ্রাফিতে। পরের ছবি ‘জানি দেখা হবে’ আরেক তীব্র ভালবাসার গল্প, তবে এবার আর বাস্তবতা নয়, অলৌকিক পরাবাস্তবতার দিকে ঝুঁকে গেছিল কাহিনির অভিমুখ। ছোট প্রযোজকের তৈরি দুটো ছবির একটাও বক্স অফিস সাফল্য পায়নি। অতঃপর বাংলার সবচেয়ে বড় প্রযোজকের সৌজন্যে সবিতা ভাভির পর্নো কমিকসের সঙ্গে বাঙালির বটতলা সংস্কৃতিকে পাঞ্চ করে তার এক আশ্চর্য সিনেমা-সেলিব্রেশন করলেন সবে চৌত্রিশ পেরিয়ে পঁয়ত্রিশে পা রাখা তরুণ পরিচালক। একসময় রিমেক সিনেমার নামে একশো হাত দূরে ছিটকে যেতেন, এখন সেই শুচিবায়ুগ্রস্ততার মুখে ছাই লেপে বানিয়ে ফেলেছেন তামিল ছবি ‘পিৎজা’-র বাংলা কপি ‘গল্প হলেও সত্যি’, পোস্ট প্রোডাকশন সেরে ছবির রিলিজ হবে এই বছরেই। তাঁর আগের দুটো ছবির রিলিজ বলতে গেলে জানতেই পারেনি কেউ, আর এবার তাঁর নতুন ছবিতে বিষয় ও প্রচারগুণে হল-এর সামনে পাবলিকের লম্বা লাইন। এই সবগুলোকে যদি ভাগ্যের ইউ-টার্ন না বলবেন তো আর কাকে বলবেন?
২০১০ সালে মাঘী পূর্ণিমার দিন (৩০ জানুয়ারি) বয়সে বেশ কিছুটা বড় বান্ধবী বিদীপ্তাকে সিঁদুর পরিয়েছিল বিরসা, বিদীপ্তার প্রথম বিয়ের কন্যা মেঘনা তখন আদর করে বিরসাকে ডাকত ‘বাবুই’ বলে। ঠিক চার বছর পরের মাঘী পূর্ণিমার দিন (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিরসার এই তৃতীয় ছবির রিলিজ। দেখেশুনে মনে হয়, ইচ্ছে করেই কি এমন একটা তিথিতে ছবির রিলিজ করালেন পরিচালক? এর সঙ্গে ছবির অনবদ্য কালচার শকটা হজম করতে করতে এটাও মনে পড়ে যাচ্ছিল, এই বাংলায় একমাত্র থার্ড জেনারেশন ফিল্মমেকার হল এই বিরসা দাশগুপ্ত। ঠাকুরদা হরিসাধন দাশগুপ্ত উত্তম-সুচিত্রাকে নিয়ে বানিয়েছিলেন কমললতার মত শরৎ-সাহিত্য। বাবা রাজা দাশগুপ্ত বানিয়েছেন চমকে দেওয়ার মত সব ডকুমেন্টারি, সিরিয়াল আর টেলিফিল্ম। সেই বংশের ছেলে বিরসা বাঙালির যৌন-সংস্কৃতি নিয়ে এমন রগড় করবে না তো আর কে করবে?
বছর আষ্টেক আগে সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় শারদীয় ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘প্যান্টি’ নামে এক না-কাহিনি। নারীর পোশাক নিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির মূল স্রোতে সেই বোধহয় প্রথম কেউ এমন কিছু লিখলেন। কী আশ্চর্য, সেও ছিল হঠাৎ করে হাতে-আসা এক বাঘছাল প্রিন্টের প্যান্টির বিচিত্র অভিযাত্রা-কথা। বিরসা-দেবালয়ের এ ছবিতে ‘সবিতা ভাভি’ অনুপ্রাণিত তুমুল যৌন উদ্দামতার পাশাপাশি কোথাও যেন সঙ্গীতার সেই অনবদ্য নির্মাণশৈলীটুকুও রয়ে গেছে চুপিসাড়ে। হয় এ ছবি বাঙালি তারিয়ে তারিয়ে দেখবে, আর না হলে ইন্টারভ্যালের আগেই বদহজমের চোঁয়া ঢেঁএকুরে মরবে।
হবে না? রাতে বিছানায় আমাদের যে নিভৃত সমাজ-বহির্ভূত কামনা জাগে, সেটার কথা এমন দিনের আলোয় সোজা সাপটা বলার মত বুকের পাটা আছে নাকি আমাদের কারুর? আর এ ছবি যে সেই সব গোপন কামনাসমূহেরই উদযাপন! ভিড় করে দেখতে তো যাচ্ছে কিন্তু বাঙালি এত হাই ভোল্টেজ (এবং কিছুটা অবিন্যস্ত) রসিকতা শেষ অব্দি হজম করতে পারলে হয়!
বেশ কয়েক বছর আগের একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা এই সূত্রে বলতেই হচ্ছে। এ ছবির অন্যতম প্রধান এক কলাকুশলীর (নামটা ইচ্ছে করেই লিখলাম না) সঙ্গে সেদিন দুপুরে এক প্রোডাকশন হাউসে জরুরি মিটিং। হঠাৎ সেই তরুণের তরফ থেকে স্পষ্ট এস এম এস, ‘দুপুরে মাংস-ভাত খাবার পর খুব ইচ্ছে করল বান্ধবীকে লাগাতে। তাই মিটিং-এ আসতে পারছি না, স্যরি’। কী চমকেছিলাম সেই সহজ, সরল, স্পষ্ট এস এম এস দেখে, বলার নয়। চমকাব না? বুঝেছিলাম ওই তরুন খুব বিরল এক বাঙালি, কারণ অমন অনেস্টিটা যে অনেক চেষ্টা করলেও আমার বা আমার চেনা আর পাঁচ বাঙালির মধ্যে আসবে না।
তরুন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তের ছবি ‘অভিশপ্ত নাইটি’র ছত্রে ছত্রেও সোজা সাপটা অনেস্টি। ছবি তো নয়, চাবুক।
শীতের দিনের গরম রসের অনুভতি পেয়ে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলাম না।
ReplyDeleteভুদার রস আর ঘামের গন্ধ আমাকে পাগল করে দিল।
তাড়াহুড়া করে ঢোকাতে গিয়ে পিছলে বের হয়ে গেল.
রসে ভোদা পুড়া ভিজে গেলো.
মনে হচ্ছে একটা রড আমার গুদে ঢুকছে
বাড়ীওয়ালার ছোটো বোনকে বাসার ছাদে
ক্লাসের মেয়ে বন্ধুর পর্দা ফাটালাম
এক ঠেলায় পুরা ৭ ইঞ্চি ধোন ভইরা দিলাম
মীকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে
মেজদি কে রাম চোদা
চিড়িক চিড়িক করে মাল ঢালতে লাগলাম।
তমার ভোদা
কচি কাজের মেয়ে চোদা
হায় , আমার নুনু দিয়ে কি বেরচ্ছে?